ফরহাদ হোসেন।।
মানিকগঞ্জ জেলার দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জেলা ও সিঙ্গাইর উপজেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম সিরাজপুর-সিঙ্গাইর সড়ক। দীর্ঘদিন পর ভাঙাচোরা ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি প্রশস্ত ও শক্তিশালীকরণ হচ্ছে এমন খবরে খুশি এলাকাবাসী। তবে উন্নয়ন কাজে ধীরগতি ও ধুলার কারণে নাকাল এই পথে চলাচলকারী হাজারো যাত্রী, পরিবহন শ্রমিক।
সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন সড়ক সংলগ্ন বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা। বিষাক্ত ধুলায় দুর্ভোগের পাশাপাশি শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি দ্রুত ধুলামুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় সিরাজপুর-সিঙ্গাইর সড়কটি প্রশস্ত ও শক্তিশালীকরণের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। গত বছরের নভেম্বর মাসে দরপত্র আহ্বান করা হয়। ১২ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়কের উন্নয়ন কাজ পায় ডলি কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। চুক্তিপত্র অনুযায়ী চলতি বছরের গত ৩১ মার্চ এর কাজ শুরু হয়ে ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু সময়মতো কাজ শুরু করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চুক্তিপত্রের ৯ মাস সময় অতিবাহিত হলেও প্রকল্পের কাজ শিকিভাগও হয়নি।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কের বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং উঠিয়ে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে ধুলায় নাকাল হয়ে পড়েছে যানবাহন শ্রমিক, যাত্রী ও স্থানীয় বাসিন্দারা। ধুলার তীব্রতা এতটাই বেশি যে যানবাহন চলার সময় সড়ক অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। ধুলায় থমকে গেছে জীবনযাত্রা। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন সড়ক সংলগ্ন বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা। ধুলায় ছেয়ে গেছে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, ঘর-বাড়ি, গাছপালা ও ফসলের মাঠ। সকাল-বিকাল পানি ছিটিয়ে ধুলা নিয়ন্ত্রণ করার কথা থাকলেও তা করা হচ্ছে না।
সড়কের মানিকনগর বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় অটোরিকশাচালক আবুল হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, গাড়ি চালানোর সময় ধুলায় কিছুই দেখা যায় না। দিনের বেলাও হেডলাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। প্রায়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটে জানমালের ক্ষতিসাধন হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সাহারাইল বাজারের ব্যবসায়ী রাশেদুল ইসলাম বলেন, ধুলায় তাঁদের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যেই দোকানে ধুলার স্তর জমে যায়। ধুলায় শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে ব্যবসায়ী ও স্থানীয় জনসাধারণ।
সিঙ্গাইর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফারহানা কবির কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ধুলার কারণে ব্রংকাইটিস, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্টসহ জটিল সংক্রামক ব্যাধিতে মানুষ আক্রান্ত হয়। বাতাসে ক্ষতিকর উপাদান থাকলে ক্যান্সারের মতো রোগও হতে পারে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডলি কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল-নোমান কালের কণ্ঠকে বলেন, বর্ষাকাল ও করোনা মহামারির কারণে সময়মতো কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে সড়কটির ভাঙাচোরা স্থান স্কিয়ারিফাই ও কমপেকসন করে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। শ্রমিক সংকটের কারণে বর্তমানে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।’ শিগগিরই কাজ শুরু হবে। কাজের অগ্রগতি কম হলেও নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে জানান তিনি।
জানতে চাইলে সিঙ্গাইর উপজেলা প্রকৌশলী মুহাম্মাদ রুবাইয়াত জামান এই প্রতিবেদককে বলেন, প্রথম থেকেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন নিয়ে নানা টালবাহানা করে আসছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যথাসময়ে কাজ শুরু না করায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তিনবার তাগিদপত্র দেওয়া হয়। এর পরও কাজ শুরু না করায় চুক্তিপত্র বাতিলের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে কাজ শুরু করেন ঠিকাদার। কয়েক দিনে সড়কের বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং উঠিয়ে উধাও হয়ে গেছে ঠিকাদারের লোকজন। কাজ বন্ধ রাখায় সড়কটি এখন ধুলার রাজ্যে পরিণত হয়েছে। এতে একদিকে বেড়েছে জনভোগান্তি, অন্যদিকে বাড়ছে বায়ু দূষণ ও বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধি। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের খামখেয়ালিপনায় সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। শিগগিরই কাজ শুরু না করলে প্রকল্পের চুক্তিপত্র বাতিল করে পুনরায় দরপত্র আহবান করা হবে বলে জানান তিনি।
সিঙ্গাইর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুনা লায়লা বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। খোঁজ-খবর নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।