মাওঃ আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া।।
২০০১ সালের ১ লা জানুয়ারি বাংলাদেশ হাইকোর্ট থেকে যখন সকল প্রকার ফতোয়া অবৈধ ও বে- আইনী ঘোষণা করে রায় প্রদান করে, তখন সাথে সাথে ব্রাক্ষণবড়ীয়ার গর্বিত সন্তান আল্লামা মুফতী ফজলুল হক আমিনী ( রহঃ)রায় প্রদানকারী দুই বিচারপতিকে মুরতাদ ঘোষণা করে আন্দোলনের ডাক দেন।
মুফতী ফজলুল হক আমিনী (রহঃ)’র সেই ডাকে ব্রাক্ষণবাড়ীয়ার মুসলমানদের মাঝে নেমে আসে জেহাদি চেতনা।যার প্রতিফলন ঘটে ২০০১ সালের ৬ ফেব্রুয়ারিতে।ব্রাক্ষণবাড়ীয়ার সেই ঐতিহাসিক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে দেশব্যাপী। আন্দোলনের দাবানল জ্বলে উঠে দেশের সকলস্থরের মুসলমানদের কলিজায়।
২০০১ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ব্রাক্ষণবাড়ীয়া বাসীর প্রাণ প্রিয় নেতা আল্লামা মুফতী ফজলুল হক আমিনী( রহঃ) সহ দেশের শীর্ষ আলেম উলামাদের গ্রেফতারের খবর ব্রাক্ষণবাড়ীয়াতে আসার সাথে সাথে বিক্ষুব্ধ জনতার গর্জনে ব্রাক্ষণবাড়ীয়ার রাজপথ ছিল চোখে পড়ার মতো।
সকলের মুখে একটিমাত্র শ্লোগান ছিল যে, ” মুফতী আমিনীর মুক্তি চাই,ফতোয়া বিরুধী রায় বাতিল চাই “।পরদিন বিক্ষুব্ধ হাজার হাজার জনতা ব্রাক্ষণবাড়ীয়া জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়ায় জড়ো হয়ে বড় হুজুর( রহঃ) এর নিকট লাগাতার হরতাল সহ কঠোর কর্মসূচির দাবী করেন।
বড় হুজুর( রহঃ) তখন একদিনের শান্তিপ্রিয় হরতালের ঘোষণা করেন। হরতাল সফল করা এবং তাদের প্রিয় নেতা মুফতী আমিনীকে মুক্ত করার লক্ষ্যে সকলে ই মিছিল সহকারে নিজ নিজ এলাকায় যান।
প্রত্যেকেই যেন জেহাদি চেতনায় উজ্জীবিত এক মর্দে মুজাহিদ।নিজের জীবন উৎস্বর্গ করে দিতে সকলেই প্রস্তুত হয়ে গেছে। জীবন দিবে তবুও ফতোয়া রক্ষা ও মুফতী আমিনী (রহঃ) কে মুক্ত করতেই হবে এই চেতনা বুকে ধারণ করে আগামীকালের হরতাল সফল করতে সবাই উজ্জীবিত হয়ে গেছে।
৬ ফেব্রুয়ারি হরতাল : সেই হরতালে সংযোজন হল ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়। ভোর থেকেই চোখে পড়ল এক অভিনব চিত্র।ভোর ৬টা থেকে হরতাল শুরু হওয়ার কথা।কিন্তু গ্রেফতার শুরু হয়ে যায় ফজরের নামাজের পূর্ব থেকে ই। সাধারণ মুসল্লিগণ ফজরের নামাজ শেষে মসজিদ হতে বাহির হতে না হতেই শুরু হয় পুলিশ, বিডিআরের যৌথ মহড়া ও ধরপাকড়।
হরতাল পালনের জন্য যখন শান্তিপূর্ণ মিছিল সহকারে প্রথমে শরের প্রাণকেন্দ্রস্থল টি,এ,রোড হয়ে কালীবাড়ি যাই, তখন বিডিআরের বাধা পেয়ে মিছিল নিয়ে ফিরে আসি।আমি নিজে ও সে মিছিলের অগ্রভাগে ছিলাম।এরপর আমরা টি,এ,রোডে মিছিল ও পিকেটিং করতে থাকি। পুলিশ ও বিডিআরের যৌথ মহড়া দেখে আমাদের মধ্য থেকে কয়েকজন বলতে লাগলো আজ হয়তো কিছু একটা ঘটবে ব্রাক্ষণবাড়ীয়াতে। কারণ এভাবে যৌথ মহড়া কিংবা গ্রেফতার ব্রাক্ষণবাড়ীয়া বাসী হয়তো আর দেখেনি।
সকাল ১০টায় কোন উস্কানি ছাড়া ই শুরু হয়ে যায় হত্যাকান্ডের উন্মাদনা। লাগামহীন গুলী বর্ষণে রাজপথে ই লুটিয়ে পড়ে অসংখ্য মানুষ। পাইকারি হারে গ্রেফতারতো চলছে ই। একেরপর এক বুলেটের আঘাতে শহীদ হতে থাকে হাফেজ তাজুল ইসলাম, সুজন, আলাউদ্দিন, হাফেজ সাইফুল ইসলাম, ওসমান ও মুখলেস।
আজ পর্যন্ত জনসাধারণের মনে একটি প্রশ্ন ই উকি দিচ্ছে, আর তা হলো সেদিন ব্রাক্ষণবাড়ীয়াতে এমনকি ঘটেছিল যে, শান্তিপূর্ণ হরতালে বিনা উস্কানিতে এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালানো হলো? ফতোয়া ও ইসলাম রক্ষার আন্দোলনে শরিক হওয়া ই কি তাদের অপরাধ ছিল?
দেশে বহু হত্যাকান্ডের বিচার হলে ও ইসলামের মৌলিক বিধান ফতোয়া রক্ষার আন্দোলনে শাহাদাৎ বরণকারী ব্রাক্ষণবাড়ীয়ার ৬ শহীদের হত্যাকারীদের বিচার আজ পর্যন্ত হয়নি।
তবে যেকোনো আন্দোলন সংগ্রাম ও শাহাদাতের ঘটনা ই যে বৃথা যায়না তা আবার স্বরণ করিয়ে দিয়েছে ২০০১ সালের ঐতিহাসিক ৬ফেব্রুয়ারির আন্দোলন।
যেই ফতোয়াকে আদালত নিষিদ্ধ ঘোষণা করে রায় করেছিল, সেই ফতোয়াকে আদালত ই পূণরায় বহাল রেখে রায় দিতে বাধ্য হয়েছে ।
মূলত ২০০১ সালের ৬ফেব্রুয়ারি ফতোয়া রক্ষার আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার ভীত রচিত হয়েছে। ইসলামকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার পথকে রুদ্ধ করে দিয়েছে ফতোয়া রক্ষার আন্দোলন।রাজনৈতিক দলগুলো নতুন করে উপলব্ধি করতে বাধ্য হয়েছে যে ইসলামের বিপক্ষে অবস্থান নিলে বাংলাদেশের মানুষ যেমন ক্ষমতাচ্যুত করতে পারে ,তেমনি ইসলামের পক্ষে অবস্থান নিলে বাংলার মানুষ আবার কাউকে ক্ষমতায় বসাতে ও পারে।
যে ফতোয়াকে রক্ষার জন্য ৬ জন তালিবুলইলম ও সাধারণ মুসলমান শহীদ হয়েছে, অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিয়েছে সে ফতোয়াকে বাংলাদেশের সকলস্থরে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আজ সকল ইসলামী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া সময়ের অন্যতম দাবীতে পরিণত হয়েছে। ইসলাম পন্থী সকল শক্তি ঐক্যবদ্ধ হউক এটা ই সময়ের এখন প্রধান দাবী, সকল মুসলমানদের প্রাণের দাবী।