মো.শাহ আলম,বরুড়া।।
যে বয়সে সমাজের আট দশজন মেয়ের মতো তার লেখাপড়ার কথা অথবা টুকটুকে লাল শাড়ি পরে স্বামীর ঘরে যাওয়ার কথা, কিন্তু সেই বয়সেই এতিম ও শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে ঘরের গন্ডির মাঝে অর্ধাহারে অনাহারে দিনাতিপাত করছে মেয়েটি। হ্যাঁ বলছিলাম ফাতেমা আক্তার(১৮), পিতা মৃত আলাউদ্দিন, মাতা নাছিমা বেগম, মুগগাঁও বরুড়া, কুমিল্লা'র কথা।
মায়ের গর্ভে থাকা কালীন সময়ে তার পিতা মারা যায়, তারপর মায়ের আশ্রয়েই ছিল ফাতেমা। কিন্তু একমাত্র মেয়ের দিকে তাকিয়ে হয়তো জীবন এখানে থামাতে চায়নি গর্ভধারণী মা। তাই নানির কাছে রেখে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে অন্যত্র চলে যান। এখন নানিই তার মা, নানিই তার পিতা, নানিই তার একমাত্র অবলম্বন ও শেষ আশ্রয়স্থল।
ফাতেমা মুগগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছিল।
মেয়েদেরকে অনেকই বোঝা মনে করে, তার পর সে মেয়ে যদি হয় এতিম এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী তা হলেতো আর কথাই নেই। এই গন্ডির মধ্যেই শত লাঞ্ছনা-গঞ্জনা নিয়ে সাময়িকের জন্য নামে মাত্র বেঁচে থাকে। কিন্তু ফাতেমা সমাজের চোখে বোঝা হয়ে বাঁচতে চায় না, নিজের কর্মপ্রচেষ্টার মাধ্যমে একজন আত্মনির্ভরশীল মানুষ হিসেবে বাঁচতে চায়।
প্রতিবেশী জাকিরের ধারণ করা ভিডিও এর মাধ্যমে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ (পি পি এম) মহোদয় ফাতেমার বিষয়ে অবগত হয় এবং তাঁরই নির্দেশনায় বরুড়া উপজেলার অফিসার ইনচার্জ ইকবাল বাহার মজুমদার ফাতেমার বাড়িতে গিয়ে খোঁজ খবর নেন এবং খাদ্য সামগ্রীসহ নগদ ৫০০০ টাকা সহায়তা বাবদ প্রদান করেন।
এই মুহূর্তে ফাতেমার দরকার খেয়ে পরে বাঁচার জন্য কিছু আর্থিক সহায়তা, একটি হুইল চেয়ার। যদিও এটা কোন স্থায়ী সমাধান নয়। তার দরকার স্থায়ী চিকিৎসা অথবা দেশের কোন প্রাইভেট কোম্পানিতে প্রতিবন্ধী কোটায় চাকুরি কাজ করা। ফাতেমা হাঁটতে সমস্যা হলেও তার লেখাপড়া, কথায় স্পষ্টাতা সবই ঠিক আছে। কিন্তু কে ধরবে তার হাল, কে দিবে তাকে আশ্রয়? কে নিবে ফাতেমার চিকিৎস দায়িত্ব?
তবে হ্যাঁ, আমাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সহায়তাই ফাতেমা সহজে ফিরে পেতে পারে স্বাভাবিক চলাফেরার জীবন।
মানুষ মানুষের জন্য কিংবা সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে
এ কথা কি শুধু বই-পুস্তকেই সীমাবদ্ধ রয়ে যাবে, নাকি সত্যিই এর বাস্তবে রূপ নিব? আমরাও চাই সমাজের সকলের মতো আপনাদের সহায়তায় ফাতেম সুস্থ অবস্থায় ফিরে আসুক ও স্বাবলম্বী হোক।