মাহফুজ বাবু।।
জীবন ধারণের উপযোগী প্রায় প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক ও নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে বেড়ে চলছে। লাগাম টেনে না ধরলে বাড়তে পারে আরো। বিশেষ কোন কারন ছাড়াই প্রায় সকল পণ্যের দাম এভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় জনজীবনে বিরূপ প্রভাব পরছে। ক্ষুব্ধ ক্রেতারা দুষছেন বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফেলতি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তদারকিহীনতাকে।
জেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা চাল, ডাল, মাছ, মাংস, তেল, তরিতরকারি, ফলমূল, চিনি, লবণ, গম, আটা, রুটি, বিস্কুট সহ প্রায় দ্রব্যের মূল্য গত তিন মাসে কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে খেটে খাওয়া স্বল্প আয় ও মেহনতি মজদুর শ্রেণীর মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে।
শনিবার (৯ অক্টোবর) নগরীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায় যৌক্তিক কোন কারন ছাড়াই অস্বাভাবিক ভাবে বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব সামগ্রীর দাম।
গত কিছুদিন আগেও রাজগঞ্জ বাজারে যে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০-৪৫ টাকায়, সেই পেয়াঁজ এখন খুঁচরা বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৬০-৬৫ টাকায়। বেড়েছে বোতলজাত ও খোলা সয়াবিনের দামও। ৬৮০ টাকার ৫ লিটার তেল (কোম্পানি ভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৭১০-৭৩০ টাকায়।
জানতে চাইলে এক বিক্রেতা বলেন, একটি বা দুইটি পণ্যের দাম বাড়তে পারে। অস্বাভাবিক ভাবে সব পণ্যের দাম কিভাবে বাড়ে? এভাবে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে আমরা বিক্রেতারাও অনেকে হতাশ।
পাইকারী বাজারে দাম বাড়ায় আমরাও অসহায়।
সেনানীবাসের টিপরা বাজারে কাঁচাবাজার ও মুদির দোকানগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, মুদির সব আইটেমের দামই বেড়েছে । সপ্তাহ খানেক আগেও মোটা মসুর ডাল ৭০-৭৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে হঠাৎ করেই তা ৯৫-১০০ টাকা। আর গত মাসখানে আগে ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি চিনি এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। বেড়েছে আটা, ময়দা, আদাসহ প্রতিটি পণ্যের দাম।
বাজারগুলোতে শীতকালীন আগাম সবজির দাম আকাশ ছোঁয়া। তবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে মরিচের দাম কেজিতে কমেছে ৪০টাকা। আর অন্যান্য সব সবজির ক্ষেত্রেই ৫-১৫ টাকা বাড়তি। তবে ক্রেতারা বলছেন, নিমসার কাঁচা মালের আড়ৎ গুলোতে প্রতিদিন পণ্যের দাম ওঠানামার কারণে কোনো সবজির দাম স্থির থাকার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
বাজার করতে আসা একজন বেসরকারি চাকুরীজীবি ক্রেতা বলেন, আমি সবসময় একটা খরচের বাজেট নির্ধারণ করে বাজারে আসি। কিন্তু সে বাজেটের ভেতর কোনোদিনই বাজার শেষ করতে পারছিনা। কি খাবো? তেল-পেঁয়াজ-আটা, ময়দা সবকিছুরই দামই বাড়তি। শুধু গোলআলু ছাড়া সবকিছুই মানুষের নাগালের বাইরে। সঠিক ভাবে বাজার মনিটরিং চাই আমরা।
তিনি বলেন ’সাদা ব্রয়লার মুরগিটা দাম কম ছিলো। কিন্তু সে মুরগিও এখন আর খাওয়ার সুযোগ নাই। পেয়াঁজের দাম মুরগির দাম এত বাড়তি। কিছুদিন আগেও ব্রয়লার ১২০ টাকায় কিনেছি। সে মুরগি এখন ১৫৫-১৬০ টাকা কেজি। আর সোনালী ২২০ টাকার মুরগী এখন ৩২০ টাকা। আমরা অসহায় রীতিমতন। রোজগার সীমিত কিন্তু খরচ অনেক’।
আরেক ক্রেতা বলেন, 'অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে অযথাই পণ্য মজুদ করে দাম বাড়িয়ে চলছে। গুটি কয়েক ব্যবসায়ী দেশবাসীকে চুষে খাচ্ছে। এমনটা চলতে পারেনা।'
এমন পরিস্থিতিতে, সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ পণ্যের এ অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি নিয়ে। অনেকের প্রশ্ন, 'বাজারের পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব কার'? তথ্য বলছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর বিচ্ছিন্ন কিছু উদ্যোগ নিলেও তা তেমন কার্যকর হচ্ছে বাজার নিয়ন্ত্রণে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকারের সংশ্লিষ্টদের এ দায়িত্ব নিতে হবে। প্রয়োজনে আলাদা কমিশন করে মাঠ পর্যায়ে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। অন্যথায় পণ্যের এ দাম আরো বাড়বে। মাঠ প্রশাসন যথাযথ দায়িত্ব পালন না করা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতি এর জন্য দায়ী মনে করছেন সচেতন নাগরিকরা। তাদের মতে, নিত্যপণ্যের এমন উর্ধগতিতে ক্ষুব্ধ জনগণ সরকারের ওপর আস্থা হারাবে।