আজকের জুমার আলোচনা ইনশাআল্লাহ।
আলোচকঃ হাফেজ মোঃ নূর হোসেন,ফেনী।।
পৃথিবীতে কেউ স্থায়ী হয়েনা
হোক না সে ফেরাউন
কিংবা নমরুদ
কেউ ভবে চিরকাল রয়েনা
”মহাগ্রন্থের আয়াত সমূহ ”
সূরা হুদ আয়াত ২১ কাহাফ আয়াত ১০৩
সূরা রহমান আয়াত ৯ আহকফ ৪৬
সূরা আরাফ আয়াত ১৭৯
সূরা আনআম আয়াত ৪৮,৪৯
সূরা বায়না আয়াত ৭-৮
সূরাআসর আয়াত ১-৩ নাজম ৫০-৫২
সূরা শু‘আরা ২০৮-৯ বনী ইসরাঈল ১৬-১৭
তাফসীর দেখুন তাফসীরে তাফহীমূল কোরআন
মারেফুল কোরআন ইবনে কাসীর।
”রাসুল সাঃ হুশিয়ার বাণী”
আববাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ‘ভোরের (পূবালী বাতাস) হাওয়া দ্বারা আমাকে সাহায্য করা হয়েছে এবং দুপুর (এক প্রকার ধ্বংসাত্মক পশ্চিমা মরু বায়ু) দ্বারা আদ জাতিকে ধ্বংস করা হয়েছে’ (বুখারী ‘জিহাদ’ অধ্যায় হা/৩০৯৬)।
রাসূল মুহাম্মাদ (ছাঃ) উদাত্ত কণ্ঠ বলেন হে লোকসকল! জাহান্নাম থেকে বাঁচানোর জন্য আমি তোমাদের কোমর ধরে আকর্ষণকারী। তোমরা জাহান্নাম থেকে আমার দিকে ফিরে এসো! তোমরা জাহান্নাম থেকে আমার দিকে ফিরে এসো! কিন্তু তোমরা আমাকে পরাস্ত করে জাহান্নামে ঢুকে পড়ছ।বুখারী।
অন্য বর্ণনায় এসেছে তিনি বলেন, আমি তোমাদেরকে শত্রুবাহিনী থেকে ভয় প্রদর্শনকারী নগ্ন সতর্ককারীর ন্যায় (وَإِنِّى أَنَا النَّذِيرُ الْعُرْيَانُ)। অতএব তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচো! তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচো’! (فَالنَّجَاءُ ثُمَّ النَّجَاءُ)।[8]কিন্তু এটাই বাস্তব সত্য যে, মানুষ জেনে-বুঝে নিজের ধ্বংসের দিকে ধাবিত হয়। এজন্যই আলোচ্য আয়াতে বলা হয়েছে, إِنَّ الْإِنسَانَ لَفِيْ خُسْرٍ ‘নিশ্চয় মানুষ অবশ্যই ক্ষতির মধ্যে রযেছে’।
রাসূল (ছাঃ) বলেন,لاَنْ يَّهْدِىَ اللهُ بِكَ رَجُلاً وَاحِدًا خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ يَكُوْنَ لَكَ حُمْرُ النَّعَمِ- ‘যদি তোমার দাওয়াতের মাধ্যমে একজন লোককেও আল্লাহ সুপথ প্রদর্শন করেন, তবে সেটা তোমার জন্য সর্বোত্তম লাল উট কুরবানীর চাইতে উত্তম হবে
হজরত ওবায়দুল্লাহ বিন হিসন (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবিদের মধ্য থেকে যখন দুই ব্যক্তি মিলিত হতেন তখন তারা একজন অপরজনকে সুরা আসর না শোনানো পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন হতেন না।’ –তাবারানি
উবাই ইবনে খালাফকে ধ্বংস করুন। আব্দুল্লাহ বলেন, এদের অধিকাংশকে আমি বদরের যুদ্ধে নিহত হ’তে দেখেছি। উমাইয়া অথবা উবাই ছাড়া সবার লাশকে একটি কূপে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। উমাইয়া অথবা উবাইয়ের দেহ ছিল মাংসল ও মেদবহুল। কূপে নিক্ষেপের জন্য ছাহাবাগণ যখন তার লাশকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন সে সময় তার দেহের জোড়ায় জোড়ায় খুলে যায়। (বুখারী, ‘জিহাদ’ অধ্যায় হা/২৯৪৬)।
”গুরুত্বপূর্ণ বাণী ”
পিরামিড আজ আছে থাকবে
চিরদিন সত্যকে ডাকবে
সব রাজা মহারাজা
আর মহাবীর
কাউকে সে অবকাশ দেয়না।
কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা এই সুরায় সময়ের শপথ নিয়ে মানুষ যে ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত তা তুলে ধরেছেন, তার পাশাপাশি কারা ক্ষতির কবল থেকে মুক্ত থাকবে সে কথাও গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরেছেন। সুরাটির পুরো অর্থ হলো, ‘সময়ের কসম। নিশ্চয় মানুষ ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত। তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করতে থেকেছে এবং পরস্পরকে হক কথা ও সবর করার উপদেশ দিতে থেকেছে।’ -সুরা আসর।
ইমাম শাফেয়ি (রহ.) বলেন, মানুষ যদি এই একটি সুরা অর্থাৎ সুরা আসর নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে তাহলে এটিই তাদের হেদায়েত তথা সফলতার জন্য যথেষ্ট।
ইমাম রাজি (রহ.) একজন মনীষীর উক্তি উল্লেখ করে বলেছেন, তাহলে, একজন বরফ বিক্রেতার কথা থেকেই আমি সুরা আল আসরের অর্থ বুঝতে পেরেছি। যে বাজারে জোর গলায় চিৎকার করে বলছিল, দয়া করো এমন এক ব্যক্তির প্রতি যার পুঁজি (বরফ) গলে যাচ্ছে। তার এ কথা শুনে আমি বললাম, এইটিই হচ্ছে, আসলে ‘নিশ্চয় মানুষ ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত’ বাক্যের প্রকৃত অর্থ।
যারা সময়ের বহমান স্রোতে ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত হওয়া থেকে রক্ষা পাবে। ১. যারা ঈমান এনেছে, ২. যারা সৎকাজ করতে থেকেছে, ৩. যারা পরস্পরকে হকের উপদেশ দিতে থেকেছে এবং ৪. যারা পরস্পরকে ধৈর্য ধারণের উপদেশ দিতে থেকেছে।
ঈমানের তিনটি ধাপ রয়েছে। তা হলো, অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা, তারপর মুখে স্বীকৃতি তথা বিশ্বাস অনুযায়ী মুখে প্রকাশ করা, তৃতীয়ত বাস্তবে কাজে পরিণত করা। আল্লাহ বলেন, আসলে তারাই প্রকৃত মুমিন যারা আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর প্রতি ঈমান এনেছে এরপর কোনোরূপ সন্দেহে পতিত হয়নি।’ -সুরা হুজুরাত : ১৫।সৎকাজবিহীন ইমান একটি দাবি ছাড়া আর কিছুই নয়। ইমান ও সৎকাজ বীজ আর গাছের মতো। আল্লাহ এবং মানুষের অধিকার আদায়, মা-বাবার সেবা, বড়দের সম্মান, ছোটদের স্নেœহ, আত্মীয়স্বজন এবং পাড়া-প্রতিবেশীর অধিকার আদায়, অন্যকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকাও গুরুত্বপূর্ণ সৎকাজ। ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্য গুণ হলোÑ যারা ইমান আনে ও সৎকাজ করে তারা পরস্পরকে হক কথা বলে, হক কাজ করতে এবং ধৈর্য ধারণের উপদেশ দেয়। এর অর্থ হলোÑ ইমানদার ও সৎকর্মশীলদের আলাদা না থেকে সম্মিলিতভাবে সৎ সমাজ গড়ে তোলা। মনে রাখতে হবে সমাজে একা একা ভালো থাকা যায় না। চতুর্থ গুণ হলো ধৈর্য। সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্ব চিরন্তন। সত্য পথে চলতে গেলে বাধা-বিপত্তি আসবেই। এসব বাধা ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। আর ধৈর্যশীলদের জন্য রয়েছে আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত পুরস্কার।
তুমি জ্ঞান অর্জন কর এ বিষয়ে যে, কোন উপাস্য নেই আল্লাহ ব্যতীত এবং তোমার গোনাহের জন্য ক্ষমা চাও’ (মুহাম্মাদ ৪৭/১৯)। এখানে কথা ও কাজের পূর্বেই ইল্মের কথা বলা হয়েছে।
হৃদয়ে বিশ্বাস, মুখে স্বীকৃতি ও কর্মে বাস্তবায়নের নাম হ’ল ঈমান, যা আনুগত্যে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় এবং গোনাহে হরাসপ্রাপ্ত হয়। ঈমান হ’ল মূল এবং আমল হ’ল শাখা’। যা না থাকলে পূর্ণ মুমিন বা ইনসানে কামেল হওয়া যায় না। অতএব জনগণের ঈমান যাতে সর্বদা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়, পরিবার, সমাজ ও সরকারকে সর্বদা সেই পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। নইলে ঈমান হরাসপ্রাপ্ত হ’লে সমাজ অকল্যাণে ভরে যাবে।
মানুষ আজ ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠেছে ইহকাল পরকাল দুই কালেই ধ্বংস করছে ঈমান আমল সত্য ধৈর্য ভুলে গিয়ে দিন দিন জাহান্নামের দিকে নিজকে ধাপিত করছে।
লেখক হাফেজ মাওলানা নুরহোছাইন।
ধর্মীয় আলোচক SATV