আজকের পবিত্র জুমার খুতবা
আলোচকঃ
হাফেজ মোঃ নূর হোসাইন,ফেনী।।
বিপদ মসিবতে সহায়তা কর তুমি
দুঃখ বেদনায় শান্ত নাও তুমি
হারানোর ব্যথা যদি ঘিরে
ধরে আামকেও আল্লাহ।
”মহাবিশ্বের বিস্ময় কুরআন ”
সুরা বনী ইসরাঈল আয়াত ৫৮
সুরা রুম আয়াত ৪১
আশ শুরা আয়াত ৩০
সুরা নিসা আয়াত ৭৯
সুরা আনকাবুত আয়াত ২,৩
সুরা মুমিন আয়াত ৪৪
ইউসুফ আয়াত ৮৬
সুরা বাকারা আয়াত ১৫৫। তাফসীর হিসাবে সহায়ক তাফহীমূল কোরআন, ইবনে কাসীর।
”রাসুল সাঃ প্রিয়বানী ”
সাইয়িদুনা আলি ইবনু আবি তালিব (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন আমার উম্মত ১৫টি অপকর্মে লিপ্ত হবে, তখন তাদের ওপর বিভিন্ন বালা-মুসিবত, আজাব-গজব আসতে শুরু করবে। কাজগুলো হলো :
১. যখন গনিমতের মাল (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ) ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত করবে,
২. আমানতের সম্পদ পরিণত হবে ব্যক্তিগত সম্পদে,
৩. জাকাত আদায় করাকে জরিমানা মনে করা হবে,
৪. স্বামী স্ত্রীর বাধ্য হবে,
৫. সন্তান মায়ের অবাধ্য হবে,
৬. মা-বাবার পরিবর্তে বন্ধুবান্ধবকে সম্মান করা হবে,
৭. বাবার প্রতি জুলুম করা হবে,
৮. নিকৃষ্ট ব্যক্তিদের নেতা বানানো হবে,
৯. কোনো ব্যক্তিকে সম্মান করা হবে তার অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য,
১০. মসজিদে উচ্চস্বরে হট্টগোল করা হবে,
১১. পুরুষ লোকেরা রেশমি (সিল্কি) কাপড় পরবে,
১২. প্রকাশ্যে মদপান করা হবে,
১৩. বাদ্যযন্ত্র তৈরি করা হবে,
১৪. গায়িকা তৈরি হবে।
১৫. উম্মতের পূর্ববর্তী মহামনীষীদের প্রতি অভিসম্পাত করবে পরবর্তীরা
এসব কাজ যখন জমিনে শুরু হবে, তখন তোমরা অগ্নিবর্ষী প্রবল ঝড়, ভূমিকম্প ও কদাকৃতিতে রূপান্তরিত হওয়ার অপেক্ষা করবে। [তিরমিজি, আসসুনান : ২২১১]
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, “বিপদ যত বড় হবে, প্রতিদানও তত মহান হবে। আল্লাহ তা’আলা যখন কোনো জাতিকে ভালোবাসেন তখন তাদেরকে (বিপদে ফেলে) পরীক্ষা করেন। যে লোক তাতে (বিপদে) সন্তুষ্ট থাকে, তার জন্য রয়েছে (আল্লাহ্ তা’আলার) সন্তুষ্টি। আর যে লোক তাতে অসন্তুষ্ট হয় তার জন্য রয়েছে (আল্লাহ তা’আলার) অসন্তুষ্টি।”
সহীহ – এটি ইবন মাজাহ বর্ণনা করেছেন।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ হাদীসে আমাদের জানাচ্ছেন যে, মুমিন ব্যক্তি কখনো মুসিবতের সম্মুখীন হয় তার নিজের ব্যাপারে, তার সম্পদের ব্যাপারে বা অন্য কোনোভাবে। আর আল্লাহ তা‘আলা তাকে ঐ বিপদের বিনিময়ে সাওয়াব দান করেন যদি সে ধৈর্যধারণ করে। বিপদাপদ ও তার ভয়াবহতা যত বড় হবে আল্লাহর পক্ষ থেকে তার সাওয়াব তত বেশি হবে। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেন যে, অবশ্যই মুনিনের জন্য মুসিবত হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার ভালোবাসার নিদর্শন। নিঃসন্দেহে আল্লাহর সিদ্ধান্ত ও ক্ষমতা উভয় বাস্তবায়িত হবে। কিন্তু যে ধৈর্য ধারণ করবে এবং সন্তুষ্ট থাকবে আল্লাহ তা‘আলা অচিরেই তাকে এর প্রতিদান দিবেন। আর প্রতিদান দাতা হিসেবে তিনিই যথেষ্ট। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর ফায়সালা ও কুদরতের ব্যাপারে অসন্তুষ্ট থাকবে আল্লাহ তা‘আলা অবশ্যই তার উপর অসন্তুষ্ট হবেন। আর শাস্তিদাতা হিসেবে তিনিই যথেষ্ট।
”প্রিয় কিছু বানী”
একটি জীবনে মা বাবা ভাই বোন
থাকে আর কত প্রিয় আপজন।
আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন- ‘এমন কোনো জনপদ নেই যা আমি কেয়ামতের আগে ধ্বংস না করব, অথবা অতি কঠোর আজাব দেব’ (সূরা বনি ইসরাইল : ৫৮)।
আল্লাহতায়ালার এসব ভবিষ্যদ্বাণী আজ আমরা অক্ষরে অক্ষরে পূর্ণ হতে দেখছি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেসব আজাব আমরা প্রত্যক্ষ করছি, তা মহাধ্বংসের পূর্বলক্ষণ হয়ে প্রকাশিত হচ্ছে। আর এসব পবিত্র কোরআন তথা ইসলামের সত্যতার জ্বলন্ত নিদর্শন বহন করছে। আল্লাহতায়ালা পরম করুণাময়, তিনি কোনো জাতিকে সাবধান না করে কখনও বালা-মুসিবত দেন না। যেভাবে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আমি সতর্ক করার জন্য রাসূল প্রেরণ না করে কখনও আজাব দিই না (সূরা বনি ইসরাইল : ১৫)। তারপর আবার উল্লেখ রয়েছে- ‘নূহের পর আমি কত প্রজন্মকেই ধ্বংস করেছি। আর তোমার প্রভু প্রতিপালক তার বান্দাদের পাপের খবরাখবর রাখার ক্ষেত্রে এবং পর্যবেক্ষণের ব্যাপারে যথেষ্ট’ (সূরা বনি ইসরাইল : ১৭)।আজাবের এমন একটি দিক নেই, যেদিক দিয়ে আজ পৃথিবী আক্রান্ত হয়নি। পৃথিবীর এমন কোনো দেশ বা এমন কোনো জাতি নেই যার ওপর আজাব না এসেছে, সে যত বড় শক্তিধর রাষ্ট্রই হোক না কেন। খোদার পক্ষ থেকে শাস্তিস্বরূপ যখন কোনো আজাব আসে তখন তা থেকে রক্ষা পাওয়ার কোনো রাস্তা থাকে না। যেভাবে কোরআনে উল্লেখ রয়েছে- ‘তুমি বল, আল্লাহর হাত থেকে কে তোমাদের রক্ষা করতে পারে যদি তিনি তোমাদের কোনো শাস্তি দিতে চান? অথবা তিনি যদি তোমাদের প্রতি কৃপা করতে চান তবে কে এ থেকে তোমাদের বঞ্চিত করতে পারে? আর তারা নিজেদের জন্য আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো অভিভাবক বা কোনো সাহায্যকারীও খুঁজে পাবে না’ (সূরা আহজাব : ১৭)।
দুঃখের আঁধার শেষে
আলোর প্রভাত হাসে
হতারশার কালো মেঘে
যায়গো ভেসে।
কেউ আজ এ কথা বলতে পারি না যে, আমি নিরাপদ। আমার অন্যায় কৃতকর্মের মাত্রা আজ এতটাই ছাড়িয়েছে যে, পুরো দেহ যেন পাপে ভরপুর। আমি ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি যাই করছি না কেন, সবকিছুতেই যেন আমি অসৎকেই প্রাধান্য দিচ্ছি। এমনকি মুখে আমি যা বলছি তা-ও মিথ্যা বলছি; আল্লাহর ভয়ে দুই রাকাত যে নামাজ আদায় করছি সেখানেও দুনিয়ার চিন্তায় মগ্ন থাকছি। তাই একের পর এক আজাবের মুখোমুখি হচ্ছি। এর মূল কারণ হচ্ছে- আমার কৃতকর্মই এসবকে আহ্বান জানাচ্ছে। যেভাবে পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন- ‘মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও জলে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। এর পরিণামে তিনি কর্মের শাস্তির স্বাদ তাদের ভোগ করাবেন, যাতে তারা আল্লাহর দিকে ফিরে আসে’ (সূরা আর রুম : ৪১)।
এ পৃথিবী এমনিতেই সৃষ্টি হয়নি। এর একজন স্রষ্টা আছেন। তিনি হলেন করুণার আধার, দয়ার নিধান আল্লাহ তাআলা। তাঁর ইঙ্গিতেই পৃথিবীর সব কিছু পরিচালিত হচ্ছে। তিনি মানবজাতি সৃষ্টি করে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে ভূষিত করেছেন। আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সেরা জীব যদি তার আসল মালিককে ভুলে যায় এবং তাঁর আদেশনিষেধ অমান্য করে,তাহলে তার মালিক তার প্রতি শুধুঅসন্তুষ্টই হন না, বরংতাকে শাস্তি দিতে বাধ্য হন।