মাহফুজ বাবু।।
সবে মাত্র ১৩ বছর বয়স রবিনের, আর দশ জনের মত সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম হয়নি তার। দুই ভাই দুই বোন সহ পেশায় রাজমিস্ত্রীর জোগালী বাবা লোকমান হোসেনের ৬ সদস্যের পরিবারের বড় ছেলে সে। চান্দিনা উপজেলার গল্লাই ইউপির বাগুড়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও বাগুড়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলো সে। গত লকডাউনের শুরুতে চতুর্থ শ্রেণীতে ওঠার কদিন পরই করোনায় বন্ধ হয়ে যায় স্কুল। এরপর দীর্ঘদিন বন্ধের মধ্যেই অটোপাশ করে পঞ্চম শ্রেণী থেকে ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে উন্নিত হয় রবিন। এদিকে করোনাকালে রাজমিস্ত্রী বাবার উপার্জন কমে যাওয়ায় ৬সদস্যের পরিবারের ভরনপোষণে নিয়ে বেজায় টানাপোড়নে পরেন বাবা লোকমান হোসেন। একদিন কাজ করলে দুদিন বেকার বসে থাকতে হয়। বাধ্য হয়েই খাতা কলম ও খেলার সরঞ্জাম ফেলে পরিবারের কষ্ট লাঘবে রিকশার হাতল ধরতে হয়েছে রবিন কে। মায়াবী চেহারা কিছুটা লজ্জা মাখা মুখে শিশুসুলভ হাসি দিয়ে অকপটে স্পষ্ট মিষ্টি ভাষায় কথাগুলো জানায় সে। স্কুল খুললেও ক্লাস হয়না এখন, অভাবের সংসারে পরিবারে সমস্যা বাবার মায়ের কষ্ট তাকে এবয়সেই কতটা দায়িত্বশীল করে তুলেছে তা রবিনের কথায় স্পষ্টই বোঝা যায়। গত কয়েকমাস আগে রিকশার হাতল ধরছে সে। গড়ে ৭-৮শ টাকা ইনকাম করে প্রতিদিন। এ থেকে ২৫০টাকা মালিককে জমা দিতে হয়। এরপর বাকি যেটা থাকে তা থেকে সামান্য কিছু নিজের খাবার খরচ বাদে বাকিটা মায়ের হাতে তুলে দেয়। কাজের পাশাপাশি লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার ভীষণ ইচ্ছে রবিনের। লেখাপড়া করে ভবিষ্যতে ভালো চাকরি করতে চায় সে। ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে ভর্তি হলেও এখনো ক্লাস করা হয়নি তার। স্কুলে নিয়মিত ক্লাস শুরু হলে স্কুলে যাবে বলে জানায়। সম্ভব হলে একবেলা আর যদি পার্টটাইম রিকশা ভাড়া না পাওয়া যায় তবে সপ্তাহে তিন দিন রিকশা চালিয়ে বাকি দিনগুলো ক্লাস করে হলেও লেখাপড়া করবে সে। কথায় যথেষ্ট মাধুর্য রয়েছে তার। দরিদ্র দিনমজুর বাবার সে সামর্থ্য নেই। দুবেলার খাবার জোটানোই যেখানে মুশকিল সেখানে রবিনের লেখাপড়া চালতে পারবে না সেটা সে বেশ ভালই বুঝে গেছে। আর তাই নিজের লেখাপড়া নিজে চালানোই শুধু নয়, দুরন্ত শৈশবেই দুরন্তপনা ছেড়ে দায়িত্বশীল অভিভাবকের ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে এ বয়সেই। নিজের লেখাপড়া চালানোর পাশাপাশি ভাই বোন ও পরিবারের জন্যও কিছু করতে চায়। দেশের আইনে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ, সেই সাথে সড়ক মহাসড়কে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ বয়সেই নিজের মৌলিক অধিকার শিক্ষা ও পরিবারের কষ্ট লাঘবের গুরুদায়িত্ব কাঁধে নিয়ে রবিন কি পারবে তার স্বপ্ন পুরন করতে? পারবে কি পরিবারের বোঝা বয়ে তার লেখাপড়া চালিয়ে যেতে?